,

শখের বসে বিজনেস শুরু :: দেশবাসীর সামনে মনিপূরী পণ্য তুলে ধরছেন ‘নুংশি কণ্যা পুষ্পি’

জাবেদ তালুকদার : বাবার চাকুরির সুবাধে নিজবাড়ি শ্রীমঙ্গল ছেড়ে চুনারুঘাটে বসবাস নুংশি কণ্যা পুষ্পির। উদ্যোক্তা হওয়ার কোন ইচ্ছে বা প্ল্যান না থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৪ বছরের ব্যবধানে দেশের নারী উদ্যোক্তাদের সবচাইতে বড় প্ল্যাটফর্ম (উই) এর অন্যতম সেরা একজন উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত কানাডার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা টিভি চ্যানেল ‘দেশে বিদেশে’ এর লাইভ অনুষ্ঠান ‘কাঞ্চন কন্যা’য় অংশ গ্রহণ এবং ‘উই’ এর ৬৪ জেলার নারী উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা ‘সামিট’ ফ্যাশন সো তে নিজের পন্যের প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়ে দেশবাসীর সামনে মনিপূরী পন্যকে তুলে ধরেন তিনি। উদ্যোক্তা জীবনের নানা দিক নিয়ে তার সাথে আলাপ হয় এ প্রতিবেদকের।
উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্প জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার কোন ইচ্ছে বা প্ল্যান ছিল না আমার। ২০২০ সালে যখন করোনাকালীন সময়ে তার এক বন্ধুর বিজনেস পেইজে সেলার হিসেবে কাজ করেন তিনি। তারপর আরও পাঁচ জনকে নিয়ে মণিপুরী ঐতিহ্যের কাপড় নিয়ে বিজনেস শুরু করেন তিনি। তারা সবাই নিজেই নিজেদের কাপড় তাঁতে বুনত। মণিপুরী পোশাক ইন্নাফি, ফানেক, ওড়না এসব নিয়েই বিজনেস শুরু করেন তারা। তবে পুষ্পির অনলাইন বিজনেস এর কথা পরিবারের কেউ জানতো না। পরে যখন আস্তে আস্তে কাপড় আনা হয় তখন সবাই জানতে পারেন। তারপর থেকে তার ফ্যামিলি তাকে সার্পোট করে চলেছেন।
উদ্যোক্তা জীবনের সমস্যা এবং প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মণিপুরী সম্প্রদায়ের একজন মেয়ে নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পথটা মোটেও মসৃণ নয়, পদে পদে কাঁটা বিছানো। তবে আমাকে পুঁজি নিয়েই সবচাইতে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আমি মাত্র ২ হাজার টাকা নিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করি। আমাদের মণিপুরী শাড়ি হোক বা ওড়না এগুলোর দাম বেশি। তাই আমার এই অল্প পুঁজি দিয়ে কাজ করা বেশ কষ্টের ছিল। তাই একটু হিমশিম খাচ্ছিলাম। কয়েক পিস মণিপুরী ওড়না আনি সাথে আমাদের মণিপুরীদের ইন্নাফি ও ছিল তবে ইন্নাফি আগে কিনে রাখতাম না কারণ ইন্নাফির প্রাইজ তখন ১ হাজার থেকে ১২ শত টাকা ছিল। তাঁতিদের থেকে ইন্নাফির ছবি নিয়ে পেইজে পোস্ট দিয়েই ইন্নাফি সেল করতাম। এভাবেই কাজ শুরু করি। তারপর আস্তে আস্তে অন্য পন্য এড করি। তারপর যখন আমি আমার পরিবারকে এ বিষয়ে জানালাম বাবা আমাকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে সহোযোগিতা করেন। এতেও পুঁজির সমস্যা কমেনি। কারণ মণিপুরী ওড়নার পর ক্রেতারা আস্তে আস্তে মণিপুরী শাড়ির সাথে অনান্য পন্য চাইছিলো তাই বাবা আবারও ১০ হাজার টাকা দিয়ে আমায় সহযোগিতা করেন। সেই টাকা দিয়ে আমি মণিপুরী কিছু শাড়ি, ওড়নাসহ অন্যন্য পণ্য কিনে রাখি। তারপর আস্তে আস্তে হ্যান্ডপেইন্ট এর কাজও শুরু করি।
উদ্যোক্তা হিসেবে সবচাইতে বড় প্রাপ্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উদ্যোক্তা হয়ে নিজের একটি পরিচয় পেয়েছি। সবাই আমাকে ‘নুংশি কন্য’ নামে চিনে। সম্ভাবনাময়ী নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে আয়োজিত কানাডার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা টিভি চ্যানেল দেশে বিদেশে’র লাইভ অনুষ্ঠান ‘কাঞ্চন কন্যা’য় অংশ গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। ‘উই’ এর ৬৪ জেলার নারী উদ্যোক্তাদের মিলন মেলা ‘সামিট’ ফ্যাশন সো তে নিজের পন্যের প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়ে আমি আমাদের মণিপুরী পন্যকে ভিন্ন ভাবে সকলের সামনে তুলে ধরতে পেরেছি।
তিনি বলেন, আমি মূলত সময় কাঠানের জন্যই বিজনেস শুরু করেছিলাম। তবে, যখন উই গ্রুপটির সাথে যুক্ত হই তখন থেকেই, ‘উই’ এর অন্যন্য নারী উদ্যোক্তাদের পথ চলার পোস্ট পড়ে আমি আমার সেই অবসরের কাজকে প্রোফেশন হিসেবে বেছে নিলাম। তারপর নারী উদ্যোক্তাদেও জন্য দেশের সবচাইতে বড় অনলাইন বিজনেস প্ল্যাটফর্ম ‘উই’ এর হাতে ধরে এ পর্যন্ত আসা। ‘নুংশি ফিজোল’ পেইজের নামটি আমি আমাদের মণিপুরী ভাষায় রেখেছি এর অর্থ ভালোবাসার পোশাক/পছন্দের পোশাক।


     এই বিভাগের আরো খবর